Tuesday, 29 September 2015

History of The Karam Puja....

করম ঠাকুরের কথা 

করম বৃক্ষ পুজো করার পিছনে এক কাহিনী বর্ণিত আছে। সেই কাহিনী সারসংক্ষেপে নিম্নে বর্ণিত করা হলো।  

অনেক দিন আগের কথা।  এক গাঁয়ে কর্মু আর ধর্মু নামে দুই ভাই থাকত। তাদের ছিল সুখের সংসার। ধান, চাল, টাকা,
কড়ি  কোনো কিছুরই অভাব ছিল না তাদের। দুই ভাই চাষের কাজ মন লাগিয়ে করতো। ফলে তাদের সংসার ফলে ফসলে ভরে থাকতো। তারা দুজনেই ছিল করম ঠাকুরের ভক্ত। প্রতি বছরই তাদের ঘরে জাঁক-জমক করে করম পূজা হতো।পুজোতে বাড়িতে আত্মীয় কুটুম্বে ভরে যেত। চিঁড়ে ,মুড়ি ,ঘি ,দুধ ,হাঁড়িয়ার ছড়াছড়ি যেত ঘরে। ঢোল, ধামসা  আর মাদলের শব্দে সারা অঞ্চল মুখরিত হয়ে উঠতো। সারা রাত নাচ-গানের পর সকাল বেলা ঠাকুরকে নদীর পাড়ে পৌঁছে দিয়ে, তারা দুই ভাই ধানের ক্ষেতে ফিরে এসে বাসি ভাতে জল ঢেলে খেত। 

একবার বড় ভাই কর্মু বাসি ভাতে জল না ঢেলে গরম ভাতে জল ঢেলে খায়। গরম ভাতে জল ঢালা যে দোষের তা সে জানতো না। গরম ভাতে জল ঢালার ফলে করম ঠাকুরের গায়ে অসহ্য জ্বালা আরম্ভ হয়। সে জ্বালা আর কিছুতেই থামে না। তিনি কর্মু র উপর খুব রেগে গেলেন। তারপর থেকেই কর্মুর ক্ষতি হতে শুরু হলো। অবস্থা এমন অবস্থায় পৌঁছালো যে অর্থের অভাবে, অনাহারে কর্মু ও তার বৌ দুজনের শরীর ভেঙ্গে পড়তে লাগলো। এরই মধ্যে কর্মু আকাশবাণী পেলো  "গরম ভাতে জল ঢেলে খাবার জন্য করম ঠাকুরের গায়ে অসঝ্য জ্বালা। জ্বালা জুড়ানোর জন্য ঠাকুর সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে অমৃত কুন্ডের ঠান্ডা জলে সেই দিন থেকে ডুবছেন আর উঠছেন তবু তার  জ্বালা জুড়োয় না। কুর্মু যদি সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ে গিয়ে করম ঠাকুরকে সন্তুষ্ট করে ঘরে নিয়ে আসে তাহলে কর্মু তাঁর রোষ থেকে মুক্ত হতে পারবে।" 

কর্মু বেরিয়ে পড়ল করম ঠাকুরের উদ্দেশে। অনেক রাস্তা-ঘাট, পাহাড়-পর্বত পেড়িয়ে অসঝ্য ক্ষুদা- কষ্টে  শেষমেশ সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে কর্মু অবশেষে পৌঁছালো করম ঠাকুরের কাছে।

কর্মুর মনে আনন্দে আর ধরে না। দূর থেকেই দেখতে পেল করম ঠাকুরের সুন্দর সাজানো বাগান। সেই বাগানের মধ্যে অমৃত কুন্ডের জলে করম ঠাকুর ডুবছেন আর উঠছেন। কর্মু সেই জলে ঝাঁপ দিয়ে ঠাকুরের পা দুটো জড়িয়ে ধরেন। করম ঠাকুর তখন বলেন , পাপী তোর জন্যে আমার এই অবস্থা। ঠাকুর কর্মুকে সেখান থেকে দুর হয়ে যেতে বলেন। কর্মু ঠাকুরের কাছে কেঁদে ক্ষমা চায় আর বলে, আজ আমার দোষে ঠাকুর আপনার এই অবস্থা। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং উদ্ধারের একটা উপায় বলুন।

করম ঠাকুর কর্মুর প্রতি সন্তুষ্ট বলেন, " বাড়ি ফিরে আজকের দিনে অর্থাৎ শুক্লা একাদশীর তিথিতে আমার নামে জঙ্গল থেকে দুটো করম গাছের ডাল এনে পুঁতে 'করমঠাকুর ' মনে করে পুজো করবি। আত্মীয় স্বজন সবাইকে বাড়িতে ডেকে নাচগান আনন্দ করবি। আর পরদিন সকাবেলা করমডাল দুটো নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে পান্তা ভাতে জল ঢেলে খাবি। "

এরপর থেকেই ভাদ্র মাসে শুক্ল একাদশীতে করম পুজো মহা ধুমধামের সঙ্গে উদযাপন করা হয়।

Karam tree
                                                                        
         কৃতজ্ঞতা  স্বীকার -
1.লোকায়ত  ঝাড়খন্ড
 ( ড: বিনয়  মাহাতো )
2.www.google.com

Monday, 21 September 2015

What is Karam Festival?...

করমপুজা 



Brunches of Karam Tree


করমপূজা আসলে সাঁওতাল লোক অনুষ্ঠান ।মূলত ভাদ্র মাসে (সেপ্টেম্বর -অক্টোবর ) পূর্ণিমার দিন এই পরব হয়ে থাকে।করম ঠাকুরের কাছে সবার ভালো সাংসারিক জীবন -যাপনের জন্য আরাধনা করা হয়। করম গাছের ডাল কেটে এনে পূজা করা হয়। পূজার সাথে সাথে চলে সারারাত ধরে গান ও নাচ। গ্রামের আদিবাসীরা মনে করেন করম ঠাকুর প্রসন্ন হলে ফসল উত্পাদন ভালো হবে।  


করম পূজার সময়  আরো একটি পূজা হয়ে থাকে তা হলো "জবপরব "। গ্রামের মহিলারা বাঁশের তৈরী বাক্সের মধ্যে জব সমেত আরো নানারকম বীজ রাখেন।বাক্সটিকে অন্ধকার ঘরে রাখা হয় এবং তাতে হলুদ জল ছেটানো হয়। পূজার সময় মহিলারা বাক্সটিকে ঘিরে নাচগান করে। 
শুধুমাত্র সাঁওতালরা নয় আরো অনেক আদিবাসীরা এই অনুষ্ঠানে  মেতে ওঠে। করমকে  প্রকৃতি ও উত্পাদনের দেবতা মনে করেন অনেকে।পূজার দিন গ্রামে বড় করে অনুষ্ঠান হয়।  


করম পরব ঝাড়খন্ডে বহুল প্রচলিত অনুষ্ঠান । এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ,ওরিষ্যা,বিহার ,ছত্তিশগড়,মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশে করম ঠাকুরের জন্মতিথি পালন করা হয়। এছাড়াও রামগড়, রাঁচি, বোকারো, ধানবাদ, জামশেদপুর, পুরুলিয়া, ছিন্নমস্তকা মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলে পরব পালন করা হয়। করম এইসব অঞ্চলে এতটা জনপ্রিয় যে কিছু কিছু রাস্তার নামকরণ এর সাথে মিল রেখে করা হয়েছে। যেমন - করমপুর, করমতলা। 



Oraon Community

যেসব সাঁওতাল উপজাতি এই পূজার সঙ্গে যুক্ত থাকে তারা হলো - ওরাং, মুন্ডারা। 

তথ্যসূত্র - www.indianfestival.com
www.google.com




Monday, 14 September 2015

Concept of the Tree Festival (Karam Puja)

                  ভূমিকা     

               "এত  ভঙ্গ  বঙ্গদেশে  তবু  রঙে  ভরা "

কথাটির মধ্যে আপাতভাবে কিছুটা  অতিশয়োক্তির সন্ধান  মেলে, কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে  উক্তিটি কতখানি সত্য।  কবি যখন উক্তিটি করেছিলেন তখন বঙ্গদেশ ছিল অখন্ড ; পরবর্তীকালে  যখন  অখন্ড বঙ্গদেশ খন্ডিত হলো তখন সমস্যার  পরিমান কমা দূরে  থাকুক, তা আরো বৃদ্ধি পেল বেশি। কিন্তু  তা  স্বত্তেও কবির বাণী আজও সত্য।  শত অভাব -অনটন  এবং সমস্যা  স্বত্তেও বাঙালি তার রঙ্গপ্রিয়তাকে ত্যাগ করেনি। তা হয়তো আর কোনদিনও করতে পারবে না। সামাজিক , অর্থনৈতক কিংবা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে  সমস্যার পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে চলছে ,বাঙালি এসব স্বত্তেও তার সজীব মানসিকতার পরিচয় রেখেছে নানাবিধ  উৎসবকলার মধ্যে। যেদিন বাঙালি তার এই  উৎসব প্রিয় মনটাকে হারিয়ে ফেলবে , সেদিন তার জাতিগত বৈশিষ্ট  লোপ পাবে বলা যায়।
        উৎসবপ্রিয়  বাঙালি একদিকে যেমন শাস্ত্র নিদৃষ্ট নানাবিধ পুজার্চনায় ব্রতী হয় তেমনি লোকউৎসব এবং লৌকিক দেবদেবীর অর্চনায় ব্রতী হয়। তুলনামূলক বিচারে শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠানাদির তুলনায় লৌকিক দেবদেবীদের আরাধনা তথা লোকউৎসব  এর  সংখ্যা   আজও বাংলাদেশে অনেক অনেক  গুন বেশি। 
        লোক উৎসব শুধু লোকের উৎসব নয়। বলা যায় ,লোকের দ্বারা অনুষ্ঠিত ,লোকের জন্য ,লোকের উৎসব। 
        সাধারণ উৎসব এর  সঙ্গে শাস্ত্রীয় আচার -অনুষ্ঠানাদির ঘনিষ্ঠ যোগ। দেশের প্রায় সব অঞ্চলের মানুষই এসব উৎসব কলার সঙ্গে পরিচিত। লোকউৎসব গুলি  একেবারেই আঞ্চলিক নয়। গান -নাচ এর অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়। লোক উৎসব গুলি আঞ্চলিক তাই সব জায়গায় একই রীতিতে অনুষ্ঠিত হয় না। 
        আধুনিক জীবনযাত্রার প্রভাবে একদিকে যখন মানুষের জীবন থেকে অবকাশ বিলুপ্ত প্রায় ,অস্তিত্ব রক্ষার কঠিন সংগ্রামে গ্রামের মানুষ ক্লান্ত ,তেমনি অপর দিকে নিত্য নতুন সৃষ্টি ও তাদের সহজলভ্যতার ফলে অনেক লোকউৎসব  বিলীন হয়ে গেছে অথবা যেতে বসেছে। এগুলি চির অন্তরালে চলে যাওয়ার পূর্বে যথাযথ ভাবে সংগ্রহ বিশেষ প্রয়োজন। 
      
                  বৃক্ষ পূজা 

লৌকিকপূজা  এবং 
উৎসব বৃক্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আজ ও হিন্দুদের দ্বারা তুলসি ,বেল ,বট ,অশ্বথ গাছ গুলিকে পবিত্র বলে বিবেচিত  ও পূজিত হতে দেখা যায়।

        ঠিক তেমনি ভাবে ঝাড়গ্রাম ,ঝাড়খন্ড ,এবং আসামে সাঁওতাল আদিবাসীদের  "করম পূজা" প্রকৃত পক্ষে করম  গাছের পূজা ব্যতীত অন্য কিছু নয়।
     মূলত ভাদ্র মাসে এই উৎসব  হয়ে  থাকে। করম গাছের ডাল কেটে এনে এই পূজা করা হয়। পূজার সঙ্গে সঙ্গে চলে গান ও নাচ। গ্রামের আদিবাসীরা মনে করেন  "করম " ঠাকুরকে প্রসন্ন করলে তাদের ফলন ভালো হবে ও তাদের সংসার সুখের হবে।

            

Karam tree


  1. কৃতজ্ঞতা  স্বীকার -  লোক  ও লোক দেবতা প্রসঙ্গ (ডাক্তার : বরুণকুমার  চক্রবর্তী )
  2.  ছবি - www.google.com