করম গীতি
বর্ষাকালীন এক প্রকার শস্য উৎসব এর নাম করমউৎসব। ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের একাদশীতে সমগ্র পশ্চিম সীমান্ত বাংলার জনসমাজ করম পরবে মেতে ওঠে। সন্ধ্যার প্রাক্কালে পার্শ্ববর্তী বন থেকে করম গাছের দুটি শাখা কেটে নিয়ে আসে তরুণীরা। সারা পথ ধরে করম ঠাকুরের গান ধ্বনিত হতে থাকে। দুটি শাখাকে গ্রামের কোনো মধ্যবর্তী স্থানে কাঁচা মাটির বেদির উপর পুঁতে দেওয়া হয়। তারপর সারারাত ধরে চলে নাচ আর গান। এর নাম হলো করম গীতি। মূলত আদিবাসীদের পরব বলে এ গান নৃত্য বহুল। করম গানের সহযোগী নাচকে বলা হয় করম নাচ। অদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই পরব অবশ্যকৃত। এই গানকে দাঁড়শালিয়া নামেও অভিহিত করা হয়। এ গান যেন সঙ্গীত জগতের আদিম সঙ্গীত। বিনোদন নয় - নানারকম জাদু বিশ্বাস থেকে এর জন্ম। মাত্র দুটি চরণ ও চারটি মাত্রার উপর প্রতিষ্ঠিত এই গান দ্রুত তালের। সারারাত ধরে মাদলের ধিং ধিতাং ধিতাং - বোলের সঙ্গে সমতলে চলে পদক্ষেপণ এবং সুরক্ষেপন। সাধারনত নারীরা এই গানের ধারক। এই গানে থাকে জীবন ও সমাজের বিচিত্র অনুভূতির কথা। যা তাদের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত থাকে।
কথা গুলি হলো :-
ক> আদারে বাদাড়ে ঝিঙ্গা ঝিঙ্গায় শুধুই
জালি হে ,
ননদ মাগী ছল ছল তুলে ডালি ডালি হে।
খ > বাঁধ বাঁধালে না বাঁধালে ঘাট হে ,
ডালিম লাগাই বধু গেল পর দেহ হে।
গ > পাকিল ফাটিল ডালিম চোরে তুলে
খায় হে।
ঘ > এমন সময় বঁধু ঘরে আমার নাই হে
একদিনকার হলেদ বাঁটা দুদিনকার
বাসি লো ,
মা বাপকে বল্যে দিহ , বেজাঞ্চ সুখে
আছি লো।
এসব গানের ভাষা এবং ভাব অকৃত্রিম।
তাই তো অবলীলায় বলতে পারে :-
বাসি ভাতে নুন লঙ্কা লুচির মজা
পুরি হে।
নৌতন পিরিতির মজা চোখ ঠরাঠরি হে।
কিংবা , এখানে উল্লেখ করতে পারি -
আমার বঁধু হাল করে কেঁদে কানালির ধারে। হায় হায় - মাথার ঘাম চোখে পড়ে ,
দেখি হিয়া ফাটে।
ননদিনী লো , আমি নিজে যাব 'কাসিয়াম ' দিতে।
এখানে শ্রেণী সমাজের সুখ - দুঃখ , হাসি - কান্না , আনন্দ - উচ্ছাসের বহি:প্রকাশ। এই গানে সমাজে বাস্তবধর্মী জীবনচিত্র ফুটে ওঠে।
করম নাচের গানে আছে -
' সাঁঝে ফুঁটে ঝিঙ্গাফুল
সকালে মলিন
আজ কেনে বঁধুর
বদন মলিন হে ?
সাঁঝে ফুটে ঝিঙ্গাফুল
সকালে মলিন।'
অর্থাৎ ঝিঙ্গাফুলের সৌন্দর্য যেমন ক্ষণস্থায়ী , মানব জীবন ও তেমনি ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনকে আনন্দময় করে তোলাই মানব জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। ঝিঙ্গাফুলের সৌন্দর্যময় অস্তিত্ব যেমন ক্ষণস্থায়ী করম গানের আকারও তেমনি ক্ষুদ্র। এই ক্ষুদ্র আয়তনের মধ্যে জীবনের সামগ্রিক রূপ পরিস্ফুট করে তোলাই করম গীতির অন্যতম বৈশিষ্ট বলে একে ঝিঙ্গা গীতিও বলা হয়ে থাকে।
নৃত্য গীতির অনুষ্ঠানের জন্য ঝাড়খন্ডের প্রতি গ্রামেই একটি করে আখড়া থাকে। কর্মক্লান্ত দিনের শেষে আখড়া প্রাঙ্গনে সবাই সমবেত হলে বন্দনা গীতির মাধ্যমে নৃত্যানুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। বন্দনা গীতির পর গায়কের নিজেদের ইচ্ছামত গান নির্বাচন করেন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার - লোকয়ত ঝাড়খন্ড (ড : বিনয় মাহাত )
অর্থাৎ ঝিঙ্গাফুলের সৌন্দর্য যেমন ক্ষণস্থায়ী , মানব জীবন ও তেমনি ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনকে আনন্দময় করে তোলাই মানব জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। ঝিঙ্গাফুলের সৌন্দর্যময় অস্তিত্ব যেমন ক্ষণস্থায়ী করম গানের আকারও তেমনি ক্ষুদ্র। এই ক্ষুদ্র আয়তনের মধ্যে জীবনের সামগ্রিক রূপ পরিস্ফুট করে তোলাই করম গীতির অন্যতম বৈশিষ্ট বলে একে ঝিঙ্গা গীতিও বলা হয়ে থাকে।
নৃত্য গীতির অনুষ্ঠানের জন্য ঝাড়খন্ডের প্রতি গ্রামেই একটি করে আখড়া থাকে। কর্মক্লান্ত দিনের শেষে আখড়া প্রাঙ্গনে সবাই সমবেত হলে বন্দনা গীতির মাধ্যমে নৃত্যানুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। বন্দনা গীতির পর গায়কের নিজেদের ইচ্ছামত গান নির্বাচন করেন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার - লোকয়ত ঝাড়খন্ড (ড : বিনয় মাহাত )
No comments:
Post a Comment