Monday, 9 November 2015

Concept of Jawa Song/ Jawa Festival..

জাওয়া গীত 


জাওয়া পরব এবং করম পরব একই দিন অর্থাৎ ভাদ্রমাসের একাদশীর দিন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেসব অঞ্চলে কুর্মি - মাহাত - ভূমিজ ইত্যাদি উপজাতির বাস সেইসব অঞ্চলে এই পরব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ঝাড়খন্ডের সর্বত্রই করম পরবকে কেন্দ্র করে এর অনুষ্ঠান হয়। জাওয়া পরব ও করম পরব অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। 

জাওয়া গীতে সর্বত্রই কুমার্লি উপভাষার প্রভাব দেখা যায়। জাওয়া গীত আচার-মূলক , তাই অনেকাংশে রক্ষণশীল। 

জাওয়া পরব একটি শস্যোৎসব। এই উৎসব সত্যিই শস্যের সমৃদ্ধিকামনায় অনুষ্ঠিত হয় তা ,নয় সন্তান-কামনাও এর পশ্চাৎপটে রয়েছে। 

'জাওয়া' শস্য-কামনার উৎসব , উর্বরতাবাদ এর মুখ্য পরিচয়। একাদশীর তিন কিংবা পাঁচ কিংবা সাতদিন আগে কুমারী মেয়েরা প্রত্যূষে শয্যাত্যাগ করে বন থেকে শালের দাঁতন কাঠি ভেঙ্গে নিয়ে আসে। তারপর স্নান করে ডালায় কিংবা চুপড়িতে পুকুর বা নদীর বালি ভরে তার ওপর মুগ , কলাই , অড়হর  আদি রবিশস্য এবং ধানের বীজ ছড়িয়ে দেয়। তার ওপর  হলুদ গোলা জল ছিটিয়ে দাঁতন কাঠিগুলো ভেঙ্গে কম্পাস কাঁটার মতো ডালার বালিতে পুঁতে দেয়। এই ডালাটিকে 'জাওয়া ডালি ' বলে। ডালাটিকে সযত্নে কোঠাঘরের ভিতরে কোনো উঁচু জায়গায় , তক্তায় কিংবা শিঁকেতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। জাওয়া ডালিকে কোথাও কোথাও 'দৌড়া'ও বলা হয়। এরপর প্রতি সন্ধ্যায় কুমারী মেয়েরা সবাই মিলে ডালাটির চারপাশে ধরে গান গাইতে গাইতে আঙ্গিনায় নিয়ে যায় এবং এই ডালাটিকে ঘিরে ওদের নৃত্যগীত আরম্ভ হয়। পরস্পর হাতে-হাতে ঘন-সংবদ্ধভাবে ধরাধরি করে বৃত্তাকারে এই নৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। জাওয়াগীতে নৃত্য অপরিহার্য। 

জাওয়া আসলে করম ব্রতেরই অঙ্গবিশেষ। করম পূজার সময় গৃহাঙ্গনে , দুটি পাশাপাশি বৃত্তাকার আল্পনার মধ্যে গর্ত খুঁড়ে , কোথাও বা মাটি খুঁড়ে সেই মাটি দিয়ে আয়তাকার পুষ্করিণী তৈরী করে তার দুপাড়ে , দুটি করম ডাল পুঁতে দুটোকে একটি সুতো দিয়ে গাঁঠছ্ড়ার মত বেঁধে দেওয়া হয়। করম রাজা এবং করম রানীর প্রতীক এই দুটি ডাল আসলে সূর্য ও পৃথিবীর প্রতীক ; এই অনুষ্ঠানটি তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান। কোথাও কোথাও করম পূজা মন্ডপে সাপ ছেড়ে দেবার রীতি আছে ; কোথাও কোথাও জনশ্রুতি আছে , করম ডালের আড়াল থেকে সাপ বেরিয়ে থাকে। বিয়ে এবং সাপ  সন্তান প্রজননের প্রতীক। পুজোর প্রধান উপকরণ গুলি হলো : বালি , মাটির প্রদীপ , সলতে , ঘি ,জল ,দুধ , চালের গুঁড়ো ,শসা ইত্যাদি। 

করম ব্রত এবং জাওয়াতে শুধুমাত্র কুমারী মেয়েরাই অংশগ্রহন করতে পারে। বিবাহিতা মেয়েরা ব্রত উদযাপনে ,জাওয়া রাখায় এবং পূজায় অংশগ্রহন করতে পারে না।  কোথাও কোথাও বিবাহিত মেয়েরা বিয়ের প্রথম বছরে মাত্র অংশগ্রহন করতে পারে  তবে বিবাহিতারা নৃত্য - গীতে স্বচ্ছন্দে অংশ নিতে পারে। 

 জাওয়া গীতি হল :
১। ঈদ করম ল'জকাল্য ভাই আল্য              লিতে ল 
     আস্য ভাই বস্য পিড়ায় বেউনী দলাই      দিব। 
অর্থাৎ, করম পরবে শ্বশুড়-গৃহে বন্দিনী বধুরা পিতৃ গৃহে যাবার ছাড়পত্র পেয়ে থাকে। নববিবাহিতা বধুরা ঈদ-করমের দিন গুনে শ্বশুড়ালয়ে সব দুঃখকষ্ট অম্লানবদনে সহ্য করে প্রতীক্ষা করে থাকে। 

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ঝাড়খন্ডের লোক সাহিত্য (বঙ্কিম চন্দ্র মাহাত) 


No comments:

Post a Comment