বিভিন্ন অঞ্চলের করম পূজা
ঝাড়গ্রামের করম পূজা :- ঝাড়গ্রামে করম পূজার প্রচলন আছে। এই অঞ্চলে ভালো ফলনের জন্যই এই পরব করা হয়। ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের একাদশীর দিন নিয়ম মেনে পূজা করা হয়ে থাকে। কুর্মি , ভূমিজ লোকেরা এটি উদযাপন করে থাকে। গ্রামের মোড়ল কোনো গৃহস্থের প্রাঙ্গনকে সার্বজনীন অনুষ্ঠান স্থান হিসেবে নির্বাচিত করে। কুর্মি মেয়েরা রাতের দিকে করম গাছের ডাল কেটে আনে , সেই ডাল বেদী করে পুঁতে দেওয়া হয়। তাকে ঘিরেই চলে নাচগান। এখনকার পুজোতে সাধারনত অংশগ্রহন করে মহিলারা। ভগবানের উদ্দেশ্যে তারা গান গেয়ে থাকে। পুজোয় ব্যবহৃত উপকরণ হল - ছোলা , মুগ , মটর , কলাই ইত্যাদি। পুজোর শেষে তারা মনে করেন ভগবান খুশি হলে তাদের সব আশা-আকাঙ্খা পূর্ণ হবে।পুজোর পরের দিন গাছের ডালটাকে তারা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। কর্মু ও ধর্মুর ব্র্রত কথা শোনানো হয় পুজোর সময়।
আসামের করম পূজা :- আসামের সাঁওতাল অধিবাসীদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ন উত্সব হল করম পূজা। তারা মনে করেন , এই পূজা করলে তাদের সকলের কল্যাণ সাধন হবে। ভাদ্র মাসে একাদশীতে এই পূজা করা হয়ে থাকে। মূলত আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি সময় দিয়ে এই উত্সব হয়। এই অঞ্চলের সবাই সাধারনত করম বৃক্ষকে ঘিরেই হয়ে থাকে। সাঁওতাল অধিবাসীরা মনে করেন ,করম দেবতা খুশি হলে তারা ভালো ফসল উত্পাদন করতে পারবে এবং পরিবার সুখে থাকবে। মনে করা হয় অথবা মানুষের অন্ধবিশ্বাস , ভগবান খুশি হলে সবার মধ্যে কাজ করার উদ্দমতা দেন এবং জীবন আরোও সুখকর হয়। পূজার সময় এখানে সারারাত ধরে গান , নাচ চলে। নাচকে ঝুমাইর নৃত্য বলা হয়। এখানকার দলগত ভাবে নাচে সাথে নাচের তালে ঢোল ও মাদল বাজায় পুরুষেরা।
পুরুলিয়ার করম পূজা :- এই অঞ্চল জুড়েও ভাদ্র মাসের একাদশীতে অর্থাৎ আগষ্ট মাসের মাঝের দিকে এই উত্সব হয়। এটি চা বাগানের সাঁওতালদের উত্সব। এখানকার লোকেরাও করম নাচকে ঝুমাইরা নৃত্য বলে থাকে। এই অঞ্চলের মহিলারাও পুজোর দিন সারারাত নাচে গানে মেতে ওঠে।
ঝাড়খন্ডের করম পূজা :- করম উত্সবটি ঝাড়খন্ডে আশ্বিন অথবা কার্ত্তিক মাসে হয়ে থাকে। গ্রামের সকলে মিলে আলোচনা করে দিনটি ঠিক করে। তারপর করম গাছের ডাল আনা হয় কেটে। সেই ডাল গ্রামের মাঠের মাঝখানে পুঁতে দেওয়া হয়। সেই ডালকে ঘিরে চলে অধিবাসীদের উত্সব পুজোর উপকরণ গুলি হল - চাল , ফুল ইত্যাদি। ভগবানকে খুশি করার জন্য সারারাত ধরে চলে নাচ ও গান ধামসা-মাদলের সাথে।
একথা তো আমরা সবাই জানি , গাছ আমাদের জীবন। গাছের থেকে যেমন আমরা ফলমূল পাই ঠিক তেমনি গাছ আমাদের বেঁচে থাকার রসদ। গাছ না থাকলে অক্সিজেন থাকত না আর আমরাও বেঁচে থাকতে পারতাম না। তাই নিজেদের মঙ্গল সাধনের একটি দিক গাছকে সন্ত্তষ্ট করা, সাঁওতাল আদিবাসীদের কাছে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : www.google.com
No comments:
Post a Comment